Dr Visvesvaraya the symbol of Indian talent

  ভারতীয় মেধার প্রতীক ড. বিশ্বেশ্বরাইয়া || Dr. Visvesvaraya the symbol of Indian talent






ট্রেনের কামরার একটি ঘটনা আজও মানুষকে মনে করিয়ে দেয় ভারতীয় প্রতিভার অমর কাহিনি। ব্রিটিশ শাসনামলের কথা। কয়েকজন ইংরেজ যাত্রী ভরা কামরায় ধুতি-পাঞ্জাবি, কালো কোট আর মাথায় পাগড়ি পরা এক ভারতীয় ভদ্রলোক চুপচাপ বসে ছিলেন। ইংরেজরা তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা শুরু করল। কেউ তাঁকে গ্রাম্য ভূত বলে উপহাস করল, কেউ আবার রাগে ফেটে পড়ল যে, কেন একজন ভারতীয়কে ট্রেনে উঠতে দেওয়া হয়েছে।


কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, ভদ্রলোকের মুখে কোনো রাগ বা অপমানের ছাপ ফুটল না। তিনি যেন গভীর চিন্তায় ডুবে ছিলেন। হঠাৎ করেই তিনি দাঁড়িয়ে উঠে জোরে বললেন, “ট্রেন থামান!” মুহূর্তের মধ্যেই চেন টেনে দিলেন। ট্রেন থেমে যেতেই ইংরেজরা আরও ক্ষেপে উঠল। অশিক্ষিত, অজ্ঞ, পাগল—সব ধরনের গালাগালি তার দিকে ছুড়ে দেওয়া হলো।


গার্ড এসে কঠিন স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, কে ট্রেন থামিয়েছে। সেই ভদ্রলোক বিনয়ের সঙ্গে উত্তর দিলেন, “আমি থামিয়েছি, স্যার। যদি না থামাতাম, শত শত লোকের প্রাণ যেত।”


ইংরেজরা আবার হেসে উঠল। কিন্তু তিনি শান্ত গলায় বললেন, “এখান থেকে প্রায় এক ফার্লং দূরে রেললাইন ভাঙা। চাইলে দেখে আসুন।”


গার্ডসহ কয়েকজন যাত্রী গিয়ে দেখল, সত্যিই রেললাইনের নাট-বল্টু খোলা। ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। তখনই সবাই বিস্মিত হয়ে জানতে চাইলেন, এত দূর থেকে তিনি কীভাবে বুঝলেন।


ভদ্রলোক ব্যাখ্যা করলেন, “ট্রেনের গতির পরিবর্তন আমি কম্পন দেখে টের পেয়েছি। এটা তখনই হয়, যখন কিছু দূরে লাইন ভাঙা থাকে।”


গার্ডের চোখে বিস্ময়। ইংরেজ যাত্রীরা হতবাক। এত গভীর কারিগরি জ্ঞান কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তাঁরা ভদ্রলোকের পরিচয় জানতে চাইলেন। তিনি বিনয়ের সঙ্গে উত্তর দিলেন—

“আমি মোক্ষগুণ্ডম বিশ্বেশ্বরাইয়া, একজন ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার।”



ড. বিশ্বেশ্বরাইয়ার অবদান


ড. বিশ্বেশ্বরাইয়া কেবল একজন ইঞ্জিনিয়ার নন, তিনি ছিলেন এক দূরদর্শী পরিকল্পনাবিদ। সেচ ব্যবস্থা, বাঁধ নির্মাণ, পানি সংরক্ষণ, সড়ক ও শিল্পায়নে তাঁর অবদান অপরিসীম। মাইসোরের কৃষ্ণরাজ সাগর বাঁধ তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি, যা আজও ভারতের গর্ব।


তাঁর প্রতিভা ও কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত হন। আধুনিক ভারতের শিল্প ও প্রযুক্তি বিকাশে তাঁর ভূমিকা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, প্রতি বছর তাঁর জন্মদিন, ১৫ই সেপ্টেম্বর, সারা দেশে ইঞ্জিনিয়ার্স ডে হিসেবে উদ্‌যাপন করা হয়।



উপসংহার


ট্রেনের সেই ঘটনাটি শুধু একজন মানুষের বুদ্ধিমত্তার গল্প নয়, বরং ভারতীয়দের জ্ঞান ও দক্ষতাকে অপমানকারীদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার প্রতীক। ইংরেজরা ভেবেছিল ভারতীয়রা অশিক্ষিত, কিন্তু ড. বিশ্বেশ্বরাইয়া প্রমাণ করেছিলেন, সত্যিকারের প্রতিভা সীমান্ত মানে না, জাতপাত মানে না।


আজকের প্রজন্ম তাঁর কাহিনি থেকে শিক্ষা নিতে পারে—আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য আর জ্ঞান দিয়ে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়।




More realted article :


Satyajit Ray A Master of World Cinema



Comments

Popular posts from this blog

Salman Khan biography in English

অসম শোকস্তব্ধ কেন সবাই জুবিন গার্গকে এত ভালোবাসতেন zubeen garg biography

sarat chandra chattopadhyay biography